রফিকুল ইসলাম জীবন : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এই শহরের দুই বিশিষ্ট শিল্পপতির তৎপরতার কারনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাসীদেও মাঝে কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। দৈনিক শীতলক্ষা সহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের ভাষ্য মতে মডেল গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মাসুদুজ্জামান এবং প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল বিএনপির মনোনয়নের জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
তারা মনে করেন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চাঁপের কারনে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার একটি নূন্যতম সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই ক্ষেত্রে নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জের আসনগুলিতে বিপুল ভোটে বিএনপির নেতাকর্মীরা জয়ী হবেন বলে তারা মনে করেন। তাই আগে ভাগেই তারা এই তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। যার ফলে মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন খান এবং বিদ্রোহী কমিটির নেতা আতাউর রহমান মুকুল কিছুটা হলেও চিন্তার মাঝে রয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন খানেরই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে দুই শিল্পপতি ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। এরা দুইজনই এই শহরের বিশিষ্ট গার্মেন্ট ব্যাবসায়ী। এরা হলেন মডেল গ্রুপের মালিক মাসুদুজ্জামান এবং প্রাইম গ্রুপের মালিক আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল। সূত্রমতে জানা গেছে এই দুই ব্যবসায়ী বিএনপির সমর্থক হিসাবে পরিচিত। দুই জনেরই বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ রয়েছে।
তাই দেশে যদি আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে তারা বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র। এরই মাঝে এই দুই শিল্পপতি লন্ডনে সরাসরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের কাছে লবিং করছেন বলে জানিয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র। তবে এই দুই শিল্পপতির মাঝে মডেল গ্রুপের চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান এগিয়ে রয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে এই দুই ব্যবসায়ীর মাঝে আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। তবে তিনি লন্ডন থেে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, আসলে তিনি পরিবার নিয়ে যুক্তরাস্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ভ্রমন করছেন। এই ভ্রমনের সাথে রাজনীতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এমন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে লন্ডনে যাননি। তাই তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের কোনো সম্ভাবনাই নেই।
অপরদিকে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামানের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে মাসুদুজ্জামান পারিবারিক ভাবেই বিএনপির সমর্থক। তাই দেশে যদি আগামী নির্বান অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে তিনি বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। তবে মাসুদুজ্জামান নিজে এই মুহুর্তে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজী নন। সূত্রটি আরো জানায় তিনি পরিস্থিতি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছেন। সময় হলে তিনি মাঠে নামবেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আলহাজ্জ এডভোকেট আবুল কালাম অসুস্থ্য হওয়ায় এরই মাঝে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়কের পদ তিনি পাননি। তার স্থানে আহবায়ক হয়ে এসেছেন এডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন খান। তাই নারায়ণগঞ্জের সাধারন মানুষ ধরেই নিয়েছেন এক সময়কার জনপ্রিয় এই সাবেক এমপি হয়তো আর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না।
তবে তার ছোটো ভাই আতাউর রহমান মুকুল এবং তার ছেলে কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী কমিটি নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। কিন্তু এডভোকেট আবুল কালামের যে জনপ্রিয়তা ছিলো সেটা নেই আতাউর রহমান মুকুলের। অন্তত এমপি হওয়ার মতো অবস্থান তার নেই। তাই আবুল কালামের বিকল্প হিসাবেই দুই শিল্পপতি মাঠে নামতে পারেন বলে অনেকে ধারনা করছেন।
তবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির বর্তমান আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন খানের সমর্থকরা মনে করেন আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশগ্রহন করে তাহলে সাখাওয়াৎই হবেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। তাদের যুক্তি হলো এডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন খান বরাবরই বিএনপির একজন নিবেদিতপ্রান নেতা। বিএনপি রাস্ট্র ক্ষমতা হারানোর পর থেকে বিগত পনেরো বছর ধরে তিনি রাজপথেই রয়েছেন। এছাড়া এরই মাঝে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি বিপুল পরিমান ভোট পেয়েছিলেন। তাই আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশ নেয় তাহলে এডভোকেট সাখাওয়াৎই হবেন বিএনপি প্রার্থী।
মূলত এভাবেই এখন এডভোকেট আবুল কালামের অবর্তমানে কে হবেন বিএনপির প্রার্থী এটা নিয়ে নানা রকম জল্পনা কল্পনা চলছে। আলোচনায় এসেছেন দুই ধনাঢ্য শিল্পতি। তবে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন এই মুহুর্তে বড় কথা হলো, দেশে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা? এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করবে কিনা? সেই প্রশ্ন রয়েছে।
কারন এখনো সরকার চাইছে তাদের অধিনেই নির্বাচন করতে আর বিপরিতে বিএনপি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে এই সরকারের অধিনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। এ ছাড়া আগামী নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক খেলা জোরালো হয়ে উঠেছে। আর এই খেলায় চীন, ভারত ও রাশিয়া সরকারের পক্ষ্যে অবস্থান নিয়েছে। বিপরিতে যুক্তরাস্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা চাইছে সব দলের অংশগ্রহনে একটি অবাধ ও সুষ্টু নির্বাচন। তাই শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটা বলা যাচ্ছে না।