০২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০

এক ঘণ্টার মধ্যেই সব ওলট পালট

এক ঘণ্টার মধ্যেই সব ওলট পালট

সোজাসাপটা ডেস্ক:  এক ঘণ্টায় ওলট পালট হয়ে গেল পাকিস্তানের রাজনীতি। মূখ্য ভূমিকায় সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। নজিরবিহীন এক আদেশে ইমরান খান এখন মুক্ত হওয়ার পথে। দু'দিন আগে ইমরান খানকে আদালত প্রাঙ্গন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ ইমরান খান আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় হাজির হতেই আদালতে এসেছিলেন। এরপর অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। পাকিস্তানের রাজনীতি এখন উত্তাল। শাহবাজ শরিফ অনেকটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ইমরান খানকে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে বিদায় করতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। দখলে নিয়েছে রাজপথ।

আক্রমণের শিকার হয়েছে সামরিক স্থাপনা। যেটা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। আদালতের এই ঐতিহাসিক রায় নিয়ে চলছে এখন নানা পর্যালোচনা। শাহবাজ শরিফের সরকার এখন কী করবে? সেনাবাহিনীর ভূমিকাই বা কী হবে? সুপ্রিম কোর্ট চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। আইনের শাসনের প্রতি আদালতের অবিচল আস্থা আবারো প্রমাণিত হলো। এসব ঘটনা যখন ঘটছে তখন পাকিস্তানের জনগণ ফের রাস্তায় উল্লাস করছে। আদালত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে  এক ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে হাজির  করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ আসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শুনানি চলার সময়।  এর মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট এক অপ্রত্যাশিত আদেশ দেন। যেখানে বলা হয়, ইমরান খানকে আদালতে এখনই হাজির করুন। পরের ঘটনা এখন অতীত। এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে হাজির করা হয়।  শুনানির এক পর্যায়ে আদালতের তরফে অবিলম্বে ইমরান খানকে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়।  ইমরান খান যখন আদালতে পৌঁছান তাকে  উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাকে দেখে ভালো লাগছে।  আদালত ইমরানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। আদালত স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, ইমরান খানের গ্রেপ্তার ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি।
পর্যবেক্ষকরা ইমরান খানকে জোরপূর্বক ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটিকে সেনাবাহিনীর মধুর প্রতিশোধ হিসেবে দেখছেন। খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের আধা সামরিক বাহিনী ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল নাজির আহমেদের নির্দেশেই ইমরানকে তার হুইল চেয়ার থেকে উঠিয়ে হাইকোর্টের বায়োমেট্রিক্স রুমে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্দেহ নেই শাহবাজ শরিফের সরকার কেবল সামনে থেকে কাজ করছে। পেছনে কলকাঠি নাড়ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সব দেশেরই সেনাবাহিনী আছে। কিন্তু পাকিস্তানে ভিন্ন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে একটি দেশ। ইমরানকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের অবিশ্বাসের জন্ম হবে। মাঝখানে পিটিআই জনসমর্থন আদায়ে সক্ষম হবে। ইমরান খান যেভাবে ঘৃণার রাজনীতির জন্ম দিয়েছেন  এর জন্য অনেকেই তাকে সমর্থন করেন না। কিন্তু নির্বাচনী ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থেকে যেভাবে তাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে সেটাও কেউ সমর্থন করেন না। পাক সেনাবাহিনীর মধ্যে ভিন্ন সুর  লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একজন কর্মরত অফিসারের মা প্রকাশ্যেই বলেছেন, আমি একজন সম্মানিত সৈনিকের মা হতে চাই। একজন অসাম্মানিত, ঘৃণিত জেনারেলের নয়।

 
এর আগে আদালত চত্বর থেকে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ দলের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে গ্রেপ্তারের ফলে বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দেশটির প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ ইস্যুতে আজ বৃহস্পতিবারই যথাযথ একটি অর্ডার ইস্যু করবে আদালত। এ বিষয়ে আদালত খুবই সিরিয়াস। তিনি আরও বলেছেন, আদালত থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে আদালত অবমাননা করেছে জাতীয় জবাবদিহিতা বিষয়ক ব্যুরো (এনএবি)।

জবাবে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব অভিযোগ করেছেন, আদালতের সঙ্গে ইমরান খানের ‘লাভ অ্যাফেয়ার্স’ বা প্রেমের সম্পর্ক আছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আদালতের সমালোচনা করে বলেন, যখনই তার কাছে কোনো ওয়ারেন্ট নিয়ে যাবেন, তখন কোনো জীবন বা অঙ্গই আর নিরাপদ থাকে না।  যদি আহত পুলিশ সদস্যরা, যারা জনগণের নিরাপত্তার জন্য জীবনকে সামনে বাজি রাখেন, যদি তারা ন্যায়বিচার না পান, যে সেনা সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করেন, যদি তিনি ন্যায়বিচার না পান, পক্ষান্তরে ওই ব্যক্তি- যে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন, তিনি যদি ছাড় পান, তাহলে দেশ শুধুই জ্বলবে। আর কিছু নয়। ইমরান খানকে উদ্দেশ্য করে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট তাকে ছাড় দেয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাকে রিমান্ডে পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এটা এ যাবতকালের সবচেয়ে দ্রুতগতির ছাড় দেয়ার ঘটনা।