রফিকুল ইসলাম জীবন : নারায়ণগঞ্জে রাজনীতির নামে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে সন্ত্রাস। বিশেষ করে সরকারী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীরা নিজেদেরকে সরকারী দল লোক পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন নেতার লোক হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে। এরা আবার নেতাদের সাথে ফটো তুলে সেই ফটো ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে স্থানীয় সাধারন মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তার করছে। এভাবে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠেছে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ।
এসব সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজী, মাদক ব্যবসা, ব্যবসার নামে জোরজবরদস্তি এবং জমি দখল সহ সব ধরনের অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে এরা জোর করে যারা বাড়ি নির্মান করছেন তাদেরকে ইট বালি রড সিমেন্ট সাপ্লাই দিচ্ছে। বাড়ি ওয়ালাদেরকে এসব নির্মান সামগ্রী বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে বেশি দামে নির্মান সামগ্রী কিনতে বাধ্য করছে সন্ত্রাসীরা। কেউ তাদের কাছ থেকে নির্মান সামগ্রী কিনতে না চাইলে ওই বাড়ি নির্মানের কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
আর নারায়ণগঞ্জ শহর, বন্দর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের সর্বত্র চলছে এই ভয়াবহ সন্ত্রাস। যার ফলে প্রায়ই ঘটছে অঘটন। আর শতকরা নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে মুখ বুঝে সব কিছু সহ্য করছে সাধারন মানুষ। যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরকে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
এদিকে এ বিষয়ে আলাপকালে মাসদাইর এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন বৃহত্তর মাসদাইরের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠেছে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ। ওরা সরকারী দলের প্রভাবশালী নেতাদের নাম ভাঙ্গাচ্ছে। ফলে পুলিশ প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নিচ্ছে না। তিনি বলেন সাধারন মানুষ থানায় গেলেও থানা পুলিশ কোনো ব্যাবস্থা নেয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ গ্রহন করলেও কোনো ব্যাবস্থা নেন না। যার ফলে এক প্রকার বিনা বাধায় তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তিনি আরো বলেন সন্ত্রাসীরা মূলত রাজনৈতিক শেল্টার পাওয়ার কারনেই পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নিচ্ছে না।
এদিকে ফতুল্লার কাইয়ুমপুর এলঅকার জয়নাল আবেদিন জানান, তাদের এলাকায়ও বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক শেল্টারে সন্ত্রাস চলছে। তবে সম্প্রতি গত কয়েক মাস ধরে পরিস্থিরি চরম অবনতি ঘটেছে। এলাকার মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই। মাদক ব্যাবসা, চুরি ও ছিনতাই এখন একেবারেই প্রকাশ্য বিষয়। আর এমতাবস্থায় কেউ র্যাব পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয় না। বরং আইনশৃংখলা বাহিনীকে জানালে উল্টো ফল হচ্ছে।
কেউ থানায় গেলে শুরু হয় নতুন হুমকি ধমকি। আর পুলিশতো কোনো ব্যাবস্থাই নেয় না। বরং পুলিশ বলে দেয় সন্ত্রাসীদের সাথে মানিয়ে চলতে এবং বিচার শালিশের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে। তাই ওই এলাকার মানুষ এখন একেবারেই হতাশ হয়ে পরেছে। রীতিমতো আতংকের মাঝে বসবাস করছে কাউয়ুমপুরের মানুষ।
একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন ফতুল্লার মুসলিম নগর এলাকার বাসিন্দারা। তারা জানান ওই এলাকায় সম্প্রতি বেড়েছে ভ’মি দস্যুতা। আর এই ভ’মি দস্যুতার সাথে ওই এলাকার এক শ্রেনীর মুরুব্বীও জরিত। ওই মুরুব্বীরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং বিচার শালিশের নামে টাকার বিনিময়ে নানা ভাবে হয়রানী করছে ভ’মির মালিকদেরকে।
আর সন্ত্রাসী গ্রুপগুলি যার তার জমিতে গিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিচ্ছে। ফলে ওই এলাকার জমির মালিকরা কোনো ন্যায় বিচার পাচ্ছেনা বলে তারা জানান।
একই রকম অবিযোগ পাওয়া গেছে বন্দর, নারায়ণগঞ্জ শহর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা থেকেই। যতো দিন যাচ্ছে ততোই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।