সোজাসাপটা রিপোর্ট: নারায়ণগঞ্জের বন্দরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একটি জমির দখল নিতে গিয়ে তাদের ছোড়া গুলিতে ১জন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহতের ঘটনায় পিজা শামীমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ৪১ জনকে আসামী করে বন্দর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে গুলিবিদ্ধ মঈনুল হক পারভেজের ছোট ভাই তানভীর আহমেদ বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় ৪ জনসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের শাহ্জাদার ছেলে রায়হান জাদা রবি (৪৫), রূপগঞ্জের ভুলতার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মামুন (৪৮), বন্দরের চুনাভূরার হাবিবের ছেলে মনির হোসেন মনা (৫২) ও খানবাড়ি এলাকার মৃত জুলমত আলীর ছেলে কবির হোসেন (৫৫)। অন্য আসামীরা হলো, আলী হায়দার শামীম (৬৫), ঢাকার আদাবরের নবীনগর হাউজিং সোসাইটির সেকান্দার মিয়ার ছেলে নূর মোহাম্মদ (৫৫), সদর উপজেলার আমির হোসেন (৩৮), উৎসব (৪০), মুকিত (৪৫), মুহিদ (৪০), পাঠান রনি (৪২)।
মামলার আসামীরা সবাই নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত আজমেরী ওসমানের সহযোগী। আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের ৪ বারের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে। আর গুলিবিদ্ধ মঈনুল হক পারভেজ জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায়ক ও বন্দরের কালাগাছিয়া ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান রাইসুল হকের ছেলে।
বন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. তাসলিম উদ্দিন বলেন, জমি দখলের চেষ্টাকালে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার ঘটনায় মঈনুল হকের ছোট ভাই বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলার বাদী তানভীর আহমেদ বলেন, তাদের জমি দখল করতে এসে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ভাইকে মঈনুল হককে গুলি করেছেন আসামি মামুন। তার ভাইয়ের বা পায়ে গুলি লেগেছে। তার ভাইকে বাচাতে ভাবি আবিদা সুলতানা সোমা এগিয়ে এলে তাকে বা পায়ে গুলি করেন পিৎজা শামীম। লাঠিসোটার আঘাতে তার পা ভেঙে গেছে। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) দুজনের পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তারা সেখানে চিকিৎসাধীন। তাদের বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর এবং রান্নাঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মঈনুল হকের কয়েকজন স্বজন বলেন, আজমেরী ওসমান তাদের জমি জোর করে দখলে নিতে চান। তিনি লোক পাঠিয়ে বারবার তাদের হুমকি ধামকি দিয়েছেন। ঘটনার ২ মাস আগে জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আজমেরী ওসমানের কাছে বারবার গেলেও তিনি ঘুরিয়েছেন। হামলার দুই দিন আগে গভীর রাতে বাড়িতে লোক পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে ওই ঘটনার পর থেকে মঈনুল হকের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা দাবি করে মঈনুল হকের চাচা আবু তালেব বলেন, তারা যদি সত্যিকার অর্থেই জমি পান, তাহলে তারা কাগজপত্র নিয়ে বসুক। সেটি না করে আজমেরী ওসমান তার লোকজন পাঠিয়ে জোর করে জমি দখল করে নিতে চান।
মামলার আসামিরা কার লোক জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, পিৎজা শামীমসহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পিৎজা শামীম ও মোটরসাইকেল বহর নিয়ে যারা জমি দখল করতে আসছেন, তারা কার লোক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটাও আপনিসহ সবাই জানেন, তারা কার লোক।’ এর বেশি কিছু বলতে মন্তব্য করতে চাননি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে বন্দর উপজেলার ফরাজীকান্দা এলাকায় প্রয়াত রাইসুল হকের মালিকানাধীন ৬৬ শতাংশ জমি দখল করতে যান আজমেরী ওসমানের ক্যাডাররা। বাধা দিলে গুলি করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হন মঈনুল হক ও তার স্ত্রী সোমা। আহত হন ১৫ জন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। সেখানে তাদের ফেলে যাওয়া ৪টি মোটরসাইকেল ভাংচুর এবং দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।